আজ || রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
শিরোনাম :
 


আজ ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক এমএনএ শহীদ এম.এ গফুর’র ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ ৬ জুন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক পাইকগাছা-কয়রার কৃতি সন্তান সাবেক এমএনএ শহীদ এমএ গফুরের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।
খুলনার ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এমএ গফুর বাংলা ১৩৩২ বঙ্গাব্দে ২৬ বৈশাখ খুলনার (বর্তমান) কয়রা উপজেলার হরিনগর গ্রামের এক সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৃত জনাব আলী সানা, মাতা সোনাবান বিবি। কর্মময় জীবনে তিনি যেমন ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছের মানুষ, তেমনি ছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে একজন আলোকিত ব্যক্তি।
শহীদ এম এ গফুর ছিলেন ৪ ভাই ও দু’বোনের পঞ্চম। তিনি কপিলমুনি স্কুল থেকে প্রাইমারী শেষ করে পাশ্ববর্তী আশাশুনির বুধহাটা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন খুলনার ঐতিহ্যবাহি বিএল কলেজে। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন (ন্যাপ) রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। এইচএসসি পাশ করার পর বিএ পড়াকালীন শুরু হয় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন। ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকার রাজপথে রক্তঝরার খবরটি খুলনায় পৌঁছায় পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারী, আর তখনই রাজপথে নেমে আসে খুলনার ছাত্রসমাজ। এদিন সমীর আহম্মেদের নেতৃত্বে নগরীর আহসান আহম্মেদ রোডের এ কে শামসুদ্দিন আহমেদ শুনুর আজাদ গ্রন্থাগারে প্রথম বৈঠক করেন খুলনার ছাত্রসমাজ। বৈঠকে এমএ গফুরসহ উপস্থিত ছিলেন আবু মোহাম্মদ ফেরদৌস, এমএ বারী, নূরুল ইসলাম দাদু, এসএম জলিল, জাহিদুল হক  তোফাজ্জেল হোসেনসহ অনেকেই। বৈঠকে কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেন উপস্থিত সকলেই। পরবর্তী এ আন্দোলনে নেতৃত্বদেন এমএ গফুর। তখনকার মুসলিমলীগের গুন্ডা ও পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে গফুরসহ তার সহকর্মীরা পায়ে হেঁটে নগরীর স্কুল, কলেজগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। পুলিশের হয়রাণীর শিকার ও মিথ্যা মামলায় জেলও খাটেন আন্দোলনের অনেকেই।
এম এ গফুর বিএল কলেজ থেকে বিএ পাশ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগে যোগদান করার মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে ঝাঁপিয়ে পড়েন গণঅভ্যূত্থান আন্দোলনে। ধীরে ধীরে তিনি আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পাইকগাছা-কয়রা ও আশাশুনি এলাকা থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ৯নং সেক্টরে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৯ মাসের স্বসস্ত্র সংগ্রামে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসার পর এমএ গফুরের অনুরোধে ভেঁড়ি বাঁধ নির্মাণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২২ ফেব্রুয়ারী সফর করেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার আলমতলা এলাকায়।
ভেঁড়িবাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য সামাজিক উন্নয়ন কাজ ও সহজ সরল জীবন যাপনে সাধারণ মানুষের কাছে এমএ গফুর হয়ে ওঠেন একজন আলোকিত ব্যক্তি। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে ওঠেন স্বার্থন্বেষী একটি মহল। ১৯৭২ সালের ৬ জুন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক এমএ গফুর। ১৯৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন সহধর্মীনি লায়লা বেগম। বরেণ্য এ ব্যক্তির নামে জন্মস্থান হরিনগর ও পাইকগাছা সরল এলাকায় দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলা সদরে একটি মিলনায়তন ও সরল এলাকার প্রাইমারী স্কুলের সাথেই একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো পড়ে রয়েছে অবহেলায়।
বর্তমানে শহীদ এম এ গফুরের ৭ ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হোসনেয়ারা আমেরিকায়, পুত্র আনোয়ার ইকবাল মন্টু উপজেলা সরল এবং আনোয়ার জাহিদ, কন্যা নিশাত বানু ও তামারা বানু খুলনায় বসবাস করছেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিলেও এ আন্দোলনে যাদের অবদান ছিল তাদের অনেকেরই স্থান হয়নি ইতিহাসের পাতায়। তাদেরই মধ্যে তেমনই একজন শহীদ এমএ গফুর। ভাষা আন্দোলনে এম এ গফুরের অবদান এলাকাবাসী স্মরণ করলেও আজও ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ এমএ গফুরের। অনুরুপভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হওয়া স্বত্তেও আজও মেলেনি স্বাধীনতা পদক।
যদিও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না যোগদান করার পর তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্ইু দুইবার শহীদ এম এ গফুরকে স্বাধীনতা ও ভাষা সৈনিকের মরোনত্তর সম্মাননা প্রদান করেছেন। এজন্য ইউএনও জুলিয়া সুকায়নার নিকট এলাকাবাসী কৃতজ্ঞ।
এ ব্যাপারে শহীদ এম এ গফুরের জৈষ্ঠ্য পুত্র আনোয়ার ইকবাল মন্টু জানান, ভাষা আন্দোলনে খুলনার অবদানের বিষয়টি ইতিহাসে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। যার ফলে অনেকের ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই মেলেনি। ওই সময় যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং সক্রিয় অংশগ্রহন করেছিলো তাদেরকে ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা উচিত  ছিল।  বর্তমান স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস প্রায় অর্ধশত বছরের আর মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ৬৮ বছরের। অথচ দীর্ঘ এ সময়ে ইতিহাসের একদিকে যেমন পাতায় ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ভাষা সৈনিক শহীদ এমএ গফুরের। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার পরও এখনো পর্যন্ত মেলেনি স্বাধীনতা পদক। দেরিতে হলেও বর্তমান সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন শহীদ এম,এ গফুর ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি এবং স্বাধীনতা পদক পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন শহীদ এমএ গফুরের পরিবার ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এলাকাবাসী।
প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচীর মধ্যে পালিত হয়ে থাকলেও করোনার কারণে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পালিত হচ্ছে বরেণ্য এ ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত শুক্রবার (০৪ জুন) জুম্মাবাদ এলাকার মসজিদে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।


Top